আসসালামু আলাইকুম,
স্টোর ওয়ারহাউজের কর্মরত সকলের জন্য আজ আমি কিছু অজানা তথ্য দিতে যাচ্ছি:
সুইলস এডভাইজার শ্রদ্ধেয় এম এ সালাম সোহাগ স্যার, দীর্ঘদিন পরে স্যারের সাথে সাক্ষাতের, যাহার সুযোগ মহান আল্লাহ করে দিয়েছিলেন। স্যার তার বর্তমান প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আমার সাথে শেয়ার করেছেন, যা প্রিয় সুইলস পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি শেয়ার করেছেন।
বর্তমানে এম এ সালাম সোহাগ স্যার Sheam Aviation Services ltd এ Asst. Chief Controlar হিসেবে দায়িত্বরত আছেন, আমাদের RMG সেক্টরের সর্বোচ্চ টপ লেভেলের পদ বলা চলে। তিনি এর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বনাম ধন্য RMG প্রতিষ্ঠান সহ যেমন- Square Group, Masco Group, Ha-Meem Group, Palmal Group সহ বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ছিলেন।
স্যারের কর্মরত বর্তমান প্রতিষ্ঠান টি মূলত দেশের বাহির থেকে যতো মালামাল বাংলাদেশে আসে, সেগুলো খালাস করতে কাজ করে থাকেন, এটি মূলত একটি 3PL প্রতিষ্ঠান ( 3PL মানে থার্ড-পার্টি লজিস্টিকস , যা অর্ডার পূরণ হিসাবেও পরিচিত। একটি 3PL ওয়্যারহাউস স্টোরেজ, অর্ডার প্রসেসিং, শিপিং এবং রিসিভিং সহ ইকমার্স পূর্ণতা পরিষেবার একটি সম্পূর্ণ পরিসর প্রদান করে)।
আমরা এখনও RMG সেক্টর নিয়ে আছি, আমাদের এখনও অনেক জানার বাকি, আমাদের উচিৎ Warehouse/Store সেক্টরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্মন্ধে অভিজ্ঞতা নেয়া।
বর্তমানে এয়ারপোর্টের উক্ত প্রতিষ্ঠানের যে সকল ইউনিট গুলোর দায়িত্বে সম্মাণিত এম এ সালাম সোহাগ স্যার দায়িত্বরত আছেন এবং স্যারের সাথে আলোচনায় যা যা শিখলাম আসুন একবার শিখে নেই।
প্রথমে :
RFID: আমরা RFID সম্মন্ধে সকলেই কিছু না কিছু অবগত, যেমন : রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে ট্যাগকৃত কোন বস্তুকে খুঁজে পেতে বা চিনহিত করতে ব্যবহার করা হয়। ট্যাগ বা চিপটিতে ইলেক্ট্রনিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রতিটি ছোট চিপ সর্বোচ্চ ২০০০ বাইট তথ্য রাখার ধারণক্ষমতা রাখে। এয়ারপোর্টের প্রত্যেক টি পণ্যে RFID বাধ্যতামূলক ।
দ্বিতীয়ত:
Storage of Goods in Warehouse : মালামাল গুদামজাত করার প্রক্রিয়া :
Warehouse (A) : Dangerous Goods : Such as CO2, Sulphur, Refrigerator items ইত্যাদি, অর্থাৎ বিপদ জনক পন্য, যে ধরনের মালামাল গুলো কেমিক্যাল আইটেম এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখতে হয়।
Warehouse (B) : Semi Dangerous Goods : Such as paint, Bullet অর্থাৎ সাধারণ বিপদ জনক পন্য, যে ধরনের মালামাল গুলো রং জাতীয় এবং পিস্তলের গুলি ইত্যাদি।
Warehouse (C) : General Goods : Such all Garments Accessories Goods অর্থাৎ সাধারণ পন্য, যে ধরনের মালামাল গুলো সাধারণত মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মধ্যে পরে।
তৃতীয়ত:
1) Main Warehouse : Any Goods Items divided from the Main Warehouse, প্রধান গুদামঘর, যেখানে প্রথমত সকল মালামাল প্রথমে in-house হয়, সেখান থেকে Item অনুযায়ী ভাগাভাগি হয়ে বিভিন্ন গুদামঘরে গুদামজাত করা হয়।
2) Outside Warehouse : Many Big Machineries Item, যেখানে বড় ধরনের মেশিন গুলো গুদামজাত করা হয়।
3) Strong Warehouse : Diamond, Gold Items অর্থাৎযেখানে দামি পণ্য- যেমন : স্বর্ণ, হিরা ইত্যাদি সহ ছোটো এবং দামী পণ্য রাখা হয়।
4) Cooling Warehouse : Medicine, ঔষধ জাতীয় পণ্য, যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পণ্য রাখা হয়।
5) Perishable Warehouse : Vegetable item, Flower, Fruits যেখানে শাক-সবজি, ফলমূল জাতীয় খাদ্য পণ্য রাখা হয়।
6) Diplomatic Warehouse : Government diplomatic items, যেখানে সরকারি বিভিন্ন নথি পত্র সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রাখা হয়।
7) Human Remain Place : Dead Body, যেখানে মৃত দেহ গুদাম জাত করা হয়।
8) BGMEA Warehouse : All Garments items, যেখানে সকল ধরনের Garments এবং Textile জাতীয় পণ্য গুদাম জাত করা হয়।
চতুর্থত :
Delivery Procedure: ডেলিভারি প্রক্রিয়া
দেশের বাহির থেকে মালামাল আসার পরে আপনি অবশ্যই কোনো না কোন C&F এর সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, দায়িত্বরত C&F এর মাধ্যমে আপনাকে অবশ্যই ২১ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করতে হবে, যদি কোন কারণে আপনি ২১ দিনের মধ্যে আপনার মালামাল সকল নিয়ম মেনে খালাস করতে না পারেন, তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান আপনার মালামাল কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এর মাধ্যমে নিলামে তুলবেন, যা পরবর্তীতে লেফটবার বা ওয়েস্টেজ হিসেবে গণ্য হবে।
আসুন আরেকটু ভালো করে জানি-
7 নাম্বার পয়েন্ট, Human Remain Place : Dead Body, যেখানে মৃত দেহ গুদাম জাত করা হয়। বিস্তারিত যদি আমরা একটু আইডিয়া করতে যাই, তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনাকে একটি মৃতদেহ রিসিভ ডেলিভারির নিয়ম সম্মন্ধে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
প্রথমত লাশ রিসিভের পরে আপনাকে বিদেশ থেকে আসা ডকুমেন্টস গুলোর সাথে লাশের সকল তথ্য মিলানো লাগবে, এখানে এমনও হতে পারে, লাশের শরীরের বিভিন্ন চিহ্ন অথবা কোনো ডকুমেন্টস উল্লেখ থাকতে পারে যা আপনাকে যাচাই করে দেখতে হবে।
এরপর, আপনাকে লাশের র্যাকিং-এর জায়গায় হয়তো বিভাগ বা জেলা, পুরুষ, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ইত্যাদি অনুযায়ী লাশ র্যাকিং করতে হতে পারে
এরপর যখন ডেলিভারি প্রক্রিয়া আসবে, যারা তাদের লাশ খালাস করতে আসবে, তারা অবশ্যই কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে আসবে, আপনার গুদামঘরে প্রতিদিনই অনেক লাশ আসতেছে, আপনাকে সেখান থেকে তাদের ডকুমেন্টস অনুযায়ী মিলিয়ে সেই শতশত লাশের মধ্যে থেকে আপনার কাছে চাহিদাপত্র বা রিকিউজিশন যিনি দিয়েছেন, তার লাশ তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, এখানে এমনও হতে পারে, আপনাকে ছবি দেখে লাশের চেহারা মেলাতে হবে, কারণ Wrong Delivery করলে আপনি, আপনার প্রতিষ্ঠান সহ যারা লাশ নিতে এসেছেন তারা সহ যাদের লাশ ভুল ডেলিভারি যাবে তারা সহ এয়ারপোর্টের আরও কিছু ডিপার্টমেন্ট সহ অনেকেই বিপদে পড়বেন।
এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, কি প্রশ্ন? ২১ দিনের মধ্যে লাশে আত্মীয় স্বজনরা যদি তাদের মৃতদেহ না নিতে আসেন, তাহলে আপনি এই লাশ নিয়ে কি করবেন? এগুলো তো অন্যান্য মালামালের মতো নিলামে ওঠানো যাবেনা।
এধরণের প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট কতৃপক্ষ সহ সরকারি বিধান মেনে কিছু হাসপাতালের সাথে বৈধ ভাবে চুক্তি স্বাক্ষর থাকে যে- ২১ দিনের পরে উক্ত প্রতিষ্ঠান সকল আইন মেনে উক্ত ডেড বডি সেই হাসপাতালে পাঠান, তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ সেই ডেড বডির অংগসমূহের যা কোনো রোগীকে সুস্থ করতে পূনব্যবহার যোগ্য, তারা সেগুলো শরীর থেকে এগুলোকে সংরক্ষণ করে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করতে কাজে আসে। তার মানে, একটি ডেড বডিও, অর্থাৎ মৃত মানুষটি মৃত্যুর পরেও মানুষের কাজে আসছেন।
আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা, কিছু অজানা তথ্য জানাতে দীর্ঘদিন যাবত কথা গুলো সংগ্রহ করেছি, কাউকে মনে আঘাত দিলে অথবা কষ্ট দিলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
আমরা এখনও পরে আছি এক্সেসরিজ, ফেব্রিক্স, তৈরী গার্মেন্টস সহ ইত্যাদি পণ্য রিসিভ ডেলিভারি নিয়ে, আপনাকে যদি ভবিষ্যতের চাকরির প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হয়, তাহলে কাজের পাশাপাশি প্রচুর জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন, আর তা না হলে নিজের কপালের দোষ দেয়া ছাড়া আপনার আর কোনো রাস্তা থাকবেনা।
সংকলিত - এম সালাম সোহাগ স্যার এর মাধ্যমে
সংকলেণে - আমি মোহাম্মদ ফেরদৌস রহমান
0 Comments