কোম্পানি ভেদে সেলারি ও সুযোগ সুবিধার তারতম্য হবেই, এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। একটি বিদেশি বা মাল্টিন্যাশনাল বা দেশিয় বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর ম্যানেজার লেভেলের সেলারি বা সুযোগ সুবিধার সাথে দেশিয় ছোট খাটো অনেক কোম্পানির / গার্মেন্টসের / টেক্সটাইল এর জিএম/ডিজিএম এর বেতন বা সুযোগ সুবিধা রাত দিনের পার্থক্য আছে। এগুলোর জন্য কোন আইন বা নিয়ম কানুন নেই।
মালিক পক্ষের ইচ্ছে অনিচ্ছেই সব চলে।
অনেক বড় বড় নামীদামী গ্রুপ অব কোং এর ১৫/২০ টা ফ্যাক্টরি / ব্যবসা থাকার পরও তাদের কোন স্ট্রাকচার নেই। শুধু বেতন / ওভারটাইম ছাড়া আর কিছুই নেই। বেতনের মানও ভাল নয়।
আবার ২/৩টা ব্যবসা বা ফ্যাক্টরি র গ্রুপ অব কোং এর খুব ভাল স্ট্রাকচার দেখা যায়। ভাল বেতন ভাতা / প্রভিডেন্ট ফান্ড/ গ্র্যাচুয়িটি সহ অনেক কিছুই আছে।
মোট কথা, যদি আপনার কাছে সুযোগ থাকে তবে ভালগুলোর দিকে নজর রাখুন, যোগাযোগ রাখুন।
বিপদে পরলে যেখানে পাবেন সেখানেই ঢুকে পরুন।
আমার ব্যাক্তিগত একটি অভিসন্ধি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি.... আমার চাকুরি জীবনের ২৩ বছরের গত প্রায় ১৫ বছর ধরে আমি এটা করে আসছি......
আপনারা অনেকেই আমাদের Respected Md. Josim Uddin, Head of Store, Arkay Knit Dyeing Mills Ltd. ভাইয়ের একটা আর্টিকেল পড়েছেন, আমিও পড়েছি। আমাদের এই ষ্টোর সেক্টরের দুর্দশার বা আমাদের প্রতি মালিক পক্ষের অবহেলার কথা উনি খুব সুন্দর করে লিখেছেন...
উনার লেখায় উঠে আসা আমাদের যন্ত্রণা গুলো আমরা সবাই জানি.... এভাবে মেনে নিয়েই আমরা কাজ করছি....
বাংলাদেশের ৯০% প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট (শুধু মালিক একা নন, HR/ Recruitment authority) ষ্টোরের কাজের গুরুত্ব বুঝেন না, অথবা বুঝতে চান না..... কথাটা ৯০% সত্য
প্রতিষ্ঠান বলতে Manufacturing / trading both sector I m meaning here....
আমার এই দীর্ঘ লেখায় যদি কেউ বিরক্ত ফিল করেন, প্লিজ সরাসরি বলবেন...I'll stop...🙂
আমার অভিসন্ধির কথা বলছিলাম....
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এক মামার সাহায্যে (এটাই প্রথম এটাই শেষ আজ পর্যন্ত) BEXIMCO DENIMS এ ষ্টোরে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরির জন্য ডাক পাই। ওই সময় কম্পিউটার জানা লোকের খুব অভাব ছিল। তাই পাকিস্তানি ডিজিএম খুব পছন্দ করে আমাকে নিয়ে নিলেন।
কারন ওই ফ্যাক্টরীর ষ্টোরে প্রথম কম্পিউটার কেনা হয়েছে। কিন্তু কেউ চালাতে জানেন না....! তাই অপারেটর প্রয়োজন তাদের.....
1998 1st January Started my Journey.....
যোগ্যতা ডিগ্রি পাশ আর কম্পিউটারে ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট জানি.......
কি করে কম্পিউটার জানি সেটা আরেক ইতিহাস..... ওটা সুযোগ হলে অন্য সময় বলবো...লেখাটা লম্বা হলে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন
"কালামাজু বাইন্ডার" এর পাশাপাশি কম্পিউটার রিপোর্ট চলবে....
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৫টি ফ্যাক্টরির ৩টি টেক্সটাইল ডিভিশনে আওতায়। সব মিলিয়ে ১০/১২ টা ষ্টোর.... আমরা স্টাফ ৪০/৪৫ জন...
বসের নির্দেশে ফ্যাক্টরির বিভিন্ন সেকশনে সেকশনে ঘুরে ঘুরে অপারেশন দেখা, প্রডাক্ট চেনার কাজ চলছে, সাথে সাথে অন্য চারজন অফিস কলিগদের কম্পিউটার শেখানোর কাজও চলে গ্যাপে গ্যাপে..... এটাই আমার পুর্বের পেশা ছিল...তাই এটা করতে আনন্দই পেতাম তখন....
এরই মধ্যে দেখতে থাকলাম কলিগদের যন্ত্রনাময় ষ্টোর চাকুরী জীবন.....
বিশেষ একশ্রেণির মানুষ তাদের সাথে চাকরবাকরের মত আচরণ করছে......!!!!
আমাকে পাকিস্তানি ওই ডিজিএম (ফ্যাক্টরি হেড) বিশেষ পছন্দ করতো আর তাছাড়া আমি নতুন, তাই আমার কারো সাথে সমস্যা হতো না, প্রথম প্রায় ৩/৪ মাস.....
ধীরে ধীরে ষ্টক রিপোর্ট এক্সেলে করা শুরু করলাম.....প্রতিদিন রিপোর্ট শেষ করে ডট প্রিন্টারে প্রিন্ট করে সবার রুমে রুমে পৌছে দেয়াই আমার কাজ ছিল......
তখন কোন ইমেইল ছিল না.... তাই হার্ডকপি প্রিন্টই ছিল ভরষা...
ফিজিক্যালি আমি তখনো কোন ম্যাটেরিয়াল রিসিভ ইস্যু করতাম না....কলিগরা তাদের কাজ শেষ করে আমাকে ডকুমেন্টস গুলো দিয়ে যেতেন, আমি এন্ট্রি দিয়ে ফাইলিং করতাম......
কিভাবে কোন পেপার কিভাবে ফাইলিং করতে হয় এটাও তখন থেকে শিখতে লাগলাম.....
এক্সেল রিপোর্ট আমি নিজের মতো করেই করতে শুরু করলাম, বস কিছু কিছু দিক নির্দেশনা দিতেন, বিভিন্ন সেকশন হেডগন দিকনির্দেশনা দিতেন.... এভাবেই ধীরে ধীরে সবার কাছে গ্রহণ যোগ্য রিপোর্ট দাঁড়িয়ে গেল......
মাসের শেষে নিজ উদ্দোগেই রিপোর্টের কপি হেড অফিসের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে পাঠানো শুরু করলাম.....(অবশ্যই বসের সাথে পরামর্শ করেই).....
উনারা রিপোর্ট পেয়ে আশ্চর্য হলেন, পরে সাধুবাদও জানালেন..... ক'মাস পরই বসের প্রমোশন হয়ে গেল.....
হঠাৎই এইসব রিপোর্টের উপর ইন্টারনাল অডিট / Phy. Inventory শুরু হলো.....
এরই মধ্যে আমিও ফিজিক্যাল rcv/iss তে সরাসরি সম্পৃক্ত হলাম......অন্যের অনুপস্থিতি বা বেশি প্রেসার থাকলে, আমি মাঠে নেমে যেতাম.....
কলিগদের স্বতস্ফূর্তভাবে সহায়তা করায়, যাদের মধ্যে আমাকে নিয়ে এলার্জি ছিল, তারাও বন্ধু হয়ে গেলেন......আজো সেই বন্ধুত্ব অমলিন....
কিন্তু সেই যে বিশেষ শ্রেণির তুচ্ছতাচ্ছিল্য, এটাতো কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না.... সীমাহীন তাদের ক্ষমতা.....
অন্য ফ্যাক্টরীতেও একই সমস্যা... রাতে সবাই যখন রুমে আসি (এ রুমে ১৪ জন- কোং এর ডরমেটরী) তখন সারাদিনের দুখ সবাই শেয়ার করে.....
ভাবি আর ভাবি, কিন্তু মাথায় কোন উপায় আসে না....
তখন HR বলে কোন ডিপার্টমেন্ট ছিল না....
বলা হতো, Admin & Payroll Dept.... তাদের এক অফিসারের সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে দেখা করি... তার অনুমতি নিয়ে তার সাথে এই ধরনের ব্যবহারের প্রতিকারের সহায়তা চাই.....
তার কথা শুনে আমি আসমান থেকে ধরাম করে নিচে পরলাম........
তার কথা, "ভাই, যদি চাকরি করতে চাও তাহলে চুপ করে হজম করো..... তোমার মত লোক হাজার হাজার আছে, মাল রিসিভ ইস্যু ছাড়া তোমার আর কি কাজ?? এসব কাজ অশিক্ষিত লোকও পারে!!!""
মাথা প্রশ্ন আসলো, অন্য কোম্পানির ষ্টোরেও কি একই সমস্যা!!??
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কোথায় খোজ নিবো? আশেপাশে তো তেমন আর কোন ফ্যাক্টরীও নেই!! হটাৎ মাথায় আসলো, DHAKA EPZ আমাদের কাছেই, এতা তখন নতুনই বলা যায়... আমাদের কোং এর একটা গার্মেন্টস ওখানে আছে, ওখানেই যাবো। ওখানকার ষ্টোর ইনচার্জের সাথে কথা বলে উনার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে, ওখানে ঢোকার পারমিশনও নিলাম....
ওখানে যাওয়ার আসল উদ্দ্যেশ্য উনাকে বলিনি...
যাক দেখা করে সারাদিন উনার ওখানেই থাকলাম, আর মানুষের ব্যবহার দেখলাম....
এখানে কিছুটা ভিন্নতা পেলাম... যদিও ওটাই তখন সম্ভবত আমার প্রথম গার্মেন্টস বা গার্মেন্টস ষ্টোর দর্শন.... দেখলাম গার্মেন্টস ষ্টোরে আমাদের ওখানকার মতো ওই বিশেষ শ্রেণির লোক আসেন না....
এরপর থেকে যখনই যেখানেই পেরেছি খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি ষ্টোরের Employee দের অবস্থা..... বেশিরভাগ জায়গায়ই দেখেছি তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর বেতন ও সুবিধা বৈশম্য....
কষ্ট দিতো... পীড়া দিতো.....
কিন্তু কারোরই কিছু করার ক্ষমতা ছিল না.......
এবার একটু নিজেদের দিকে তাকালাম..... কিসের আমার অপুর্নতা....!!??
তখনকার সময়ে বেশিরভাগ সিনিয়র রা ই শিক্ষার দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন.... ইংরেজিতে দুর্বল ছিলেন.... কম্পিউটার পরিচালনায় দুর্বল ছিলেন....
তাই উনাদের এইযে সীমাহীন শারিরীক মানষিক কষ্ট, তা কেউই অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনেই করতেন না.....
উনাদের পরিশ্রম নিজে চোখে দেখেছি, তাই উনাদের হাজার হাজার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও আজো উনাদের আগের মতই শ্রদ্ধা করি....
আমি আজ যতটা তার অনেকটাই উনাদের অবদান.....
সেই সময়ের লিজেন্ড.... মোরশেদ স্যার, মরহুম হান্নান স্যার, মোস্তফা কামাল স্যার, ভৌমিক স্যার, কাওসার স্যার.... সকলকে স্যালুট..... ❤️
ভবিষ্যতের কথা ভেবে যাদের পক্ষে সম্ভব সেসব কলিগদের নিজেদের upgrade করার কথা বললাম। অনেকেই আমার কথায় রাজি হয়ে নিজেদের উন্নয়নে নেমে গেলেন.... আমিও মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে গেলাম... আলহামদুলিল্লাহ বাকিগুলো আমার ছিল...
এই চলার পথে নিজেদের মধ্যেও কিছু কিছু মানুষ পেয়েছি, যারা নিজেরাই নিজেদের under estimate করতো এবং নিজেদের অন্য ট্র্যাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা করতো। অনেকেই পেরেছেন, অনেকে পারেন নি.....
2 Comments
এটা পড়ে সত্যিই অবাক হলাম।। কি কঠিন সময়গুলোই না কাটিয়ে এতোদূর এসেছেন।
ReplyDeleteThanks for the nice presentation.
ReplyDeleteBest Regards
Sanowar (Thermax)